যোগাযোগমাধ্যমে দীনি ঘরানার ‘অনলি সিস্টার্স’ কমিউনিটি নিয়ে আমার একটা পর্যবেক্ষণ আছে। এরা পুরুষদেরকে ফ্রেন্ডলিস্টে রাখে না ফিতনার ভয়ে। বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে দেখি। কিন্তু এটাও বাস্তবতা যে, এই আপাত ফিতনামুক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে গিয়েও তাদের অনেকে গভীর ফিতনার চোরাবালিতে আটকে যায়। বিষয়টা তাদের জীবন যাপনে এত সূক্ষ্মভাবে প্রভাব ফেলে যে, তারা বুঝতেই পারে না।
ফেইসবুকে একান্ত নারীদের অনেক গ্রুপ আছে। এসব গ্রুপে ‘দীনি বোনেরা’ দীনি আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে গীবতচর্চা করে। স্বামী, শাশুড়ি ও অন্য নারীদের নিয়ে কথাবার্তা বলে। আবার কিছু গ্রুপ আছে, সেখানে গীবতচর্চা করা হয় না। কেউ গীবতচর্চা করলে গ্রুপে রাখা হয় না। সেসব গ্রুপে প্রশংসাচর্চা করা হয়। গীবতচর্চা এবং প্রশংসাচর্চা এই দু’টি থেকেই নেতিবাচক শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ আছে। বিষয়টা একটু উদাহরণসহ বললে বুঝতে সহজ হবে।
গীবতচর্চা যে ভালো নয়, এটা সবাই বোঝে। মৌলিকভাবে গীবত তো নিন্দনীয়ই, আমি এছাড়া আরেকটি বিষয়ের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করতে চাইছি। একজনের গীবত আরেকজনের জীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলে, সে বিষয়টি বলতে চাইছি। উদাহরণস্বরূপ: একজন লিখল, ‘আমাদের নবীজি স্ত্রীদেরকে ঘরের কাজে সাহায্য করতেন, অথচ আমার স্বামী আমাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে না।’ একজন তো ‘ইসলামিক উপায়ে’ গীবত করে খালাস। আরেকজন নিরীহ ফেইসবুকার, যার স্বামীও তাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে না কিন্তু এ নিয়ে তার অভিযোগ নেই, মহিলারা ঘরে কাজ করে আর পুরুষরা বাইরে, এই দুইয়ের সহযোগে সংসার—এটাই হয়ত তার মাথায় অবেচতনভাবে আছে। ‘নবীজি ঘরের কাজে সাহায্য করতেন অথচ আমার স্বামী ঘরের কাজে সাহায্য করে না’—এই বিষয়টা তার মাথায় ঢুকে যাবে। আরে, আমার স্বামীও তো ঘরের কাজে সাহায্য করে না; তারও তো ঘরের কাজে সাহায্য করা উচিত। এতে তার মনের মধ্যে একটা দুঃখবোধ জমা হতেই পারে। এরপর বিন্দু বিন্দু সিন্ধু।
ভালো নারীরা গীবতচর্চার গ্রুপে থাকে না। তারা থাকে প্রশংসাচর্চার পেইজে। সেখানে আগের উদাহরণটার বিপরীত ধরনের চর্চা হয়। কিন্তু এর মাধ্যমেও নেতিবাচক ধারণা গ্রহণ করার সুযোগ থাকে। উদাহরণস্বরূপ: একজন লিখল, ‘আমার স্বামী ঘরের কাজে সাহায্য করেন।’ এটা স্বামীর প্রশংসা। প্রশংসার অকালের যুগে এটা তো ভালো কথা-ই। কিন্তু আরেকজন নারী দেখবে— একজনের স্বামী কত ভালো, ঘরের কাজে সাহায্য করে; অথচ তার স্বামী ঘরের কাজে সাহায্য করে না। সে কামনা করবে, তার স্বামীও এরকম হোক।
এসব ‘দীনি বোনেরা’ ফেইসবুকে আসে একটু-আধটু ফেইসবুক চালাতে, ফেইসবুকের মধ্য দিয়ে দুনিয়াটা দেখতে। ফেইসবুক চালাতে এসে নিজেরা যে গভীরভাবে ফেইসবুক দ্বারা চালিত হয়, তা তারা বুঝতেই পারে না। দুনিয়া দেখতে এসে ঘরের মধ্যেই ঘুরপাক খেতে থাকে। বিভিন্ন মানুষের ঘরে ঘুরতে থাকে।
মূলত ফেইসবুক দ্বারা চালিত হয় সবাই—পুরুষরাও, আমিও। পুরুষরা যেহেতু ‘ঘরের বিষয়’ নিয়ে আলাপ করে না, ইতিবাচকও নয়, নেতিবাচকও নয়—ফলে তাদের সংসার-জীবনে এর প্রভাব পড়ে কম। তাদের হয়ত অন্য রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নারীদের তুলনায় কম হলেও সংসার-জীবনেও কিছুটা প্রভাব পড়ে।
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক সবগুলো একরকম হবে না। বৈচিত্র্য আছে, থাকবেই। আলাদা আলাদাভাবে সবগুলো সম্পর্কই সুন্দর। কারো একটা গুণ আছে, আরেকটা দোষ আছে। সব মিলিয়ে সুন্দর সম্পর্ক। ফেইসবুক দোষটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
পারিবারিক একান্ত বিষয়গুলো ফেইসবুকে বলা উচিত নয়। ঘরোয়া ব্যাপার নিয়ে যেসব গ্রুপে আলাপ হয়, সেসব গ্রুপে থাকা উচিত নয়। যাদের সংসারে ফেইসবুক জনিত সমস্যা আছে, এতে অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বাকি অর্ধেক সমস্যার সমাধান হবে ফেইসবুক পুরোপুরি ত্যাগ করলে। বাকি অর্ধেক সমস্যায় পুরুষরাও জড়িত।
© আবুল কাসেম আদিল