লিখেছেনঃ উম্মে আব্দুল্লাহ
সত্যি বলতে এই সমস্যাটা আমি নিজেও ফেস করি। আমার মনে হয় প্রায় প্রতিটা মানুষই এমন সমস্যা কমবেশি ফেস করেছেন। কারন শয়তানের কাজই হচ্ছে মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়া। আর যার যা কাজ তা তো সে করবেই। এখন কথা হচ্ছে আপনি শয়তানের ফাঁদে পা দিচ্ছেন নাকি ইগনোর করছেন।
কারন শয়তানের কাজ যেমন ওয়াসওয়াসা দেয়া তেমনি আপনার কাজ হচ্ছে সেটাকে পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া। আপনি এই সমস্যাকে যত বেশি গুরুত্ব দিবেন, এটা তত বেশি জেঁকে বসবে।
আমার বাবাকে দেখি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেন। বুঝতে পারি উনিও ভুক্তভোগী। অনেকেই বলেন উনার শুচিবায়ু রোগ আছে। কিন্তু আমরা কখনো উনাকে বলিনি এইটা নিয়ে আবার কেউ বললেও সেইটাকে ইগনোর করেছি। উনিও এইটাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ উনাকে এইজন্য কোন ডাক্তার বা বিশেষ কোন তদবির করা লাগেনি।
যেহেতু আমি বুঝি যে এইটা নিছকই শয়তানের কুমন্ত্রণা তাই ইগনোর করার চেষ্টা করি। খুব বেশি ভালো সম্পর্ক না থাকলে চেষ্টা করি তার সাথে ভালো একটু সম্পর্ক তৈরি করার যেন তার সম্পর্কে ভুল ধারনাটা ভেঙ্গে যায়। আর ভালো সম্পর্ক থাকলে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখি। যেন সে টের না পায় যে আমার ভেতরে কি চলছে।
মজার বিষয় হচ্ছে আমিও ভাবলাম এমন চিন্তা শুধু আমার মনে আসে। কিন্তু পরে দেখলাম অনেক দ্বীনি ভাই বোন আছেন যারা এই সমস্যাগুলো ফেইস করেন।
যাই হোক একটা বিষয় খেয়াল করেছি শয়তান দ্বীনি ভাই-বোনদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করার চেষ্টায় থাকে সবসময়। কারন এতে ফিতনা তৈরি হবে। দ্বীনি সার্কেলের বাইরে এই ব্যাপারগুলো তেমন গুরুত্ববহন করেনা। কিন্তু দ্বীনি সার্কেলের সবাই একে অন্যের হক্বের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন, আর শয়তান কখনোই চাইবেনা সবাই আল্লাহ তা’আলার হুকুম মেনে চলুক। তাই নানা ধরনের ফাঁদ পাততে থাকে। ফলে তৈরি হয় বিভিন্ন ফিতনা-ফ্যাসাদ।
যা বিগতকয়েকমাস ধরে প্রকট আকার ধারন করেছে।।
অথচ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লাম এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকতে বলছেন। তিনি বলেছেন, “পরস্পরে সম্পর্কচ্ছেদ করো না। একে অন্যের দোষ তালাশে লিপ্ত থেকো না। পরস্পরে শত্রুতা পোষণ করোনা। হিংসা করো না। সকলে আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে যাও।”
_____ বুখারী
যাহোক, এইবার আসি ওয়াসওয়াসা প্রসঙ্গে। ওয়াসওয়াসার কথাটার পরিবর্তে অনেকেই মেডিকেলীয় টার্ম ব্যবহার করেন। অনেকে বলেন শুচিবায়ু, অনেকে বলেন সংশয়রোগ আবার অনেকে বলেন OCD(obsessive compulsive disorder). তা যে নামই ব্যবহার করেন না কেন সমস্যাগুলো একই।
এগুলো সবই ওয়াসওয়াসার অংশবিশেষ।
অনেকে বলেন, আমি নামাজ-কালাম পড়ি পর্দা করি তবুও কেন ওয়াসওয়াসায় ভুগি?? সবসময় হীনমন্নতায় ভুগেন। সে ক্ষেত্রে একটা কথাই বলবো এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নাই। নিজেকে ছোট ভাবারও কিছু নাই।। ওয়াসওয়াসা সম্পর্কে বেশ কিছু হাদীস রয়েছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্নিত আছে যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু সংখ্যক সাহাবী তাঁর নিকট এসে বললেন, “আমরা অনেক সময় আমরা নিজেদের অন্তরে এমন কথা ও কল্পনা অনুভব করি যা মুখে আনাও গুরুতর অন্যায় মনে করি। রসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন: বাস্তবিকই তোমরা এটাকে গুরুতর অন্যায় মনে করো? তারা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। আমাদের অবস্থা তো তাই।
তখন তিনি বললেন, এটা তো স্পষ্ট ঈমান।
____মুসলিম
অর্থাৎ যখন কারও অন্তরে এই অবস্থা বিরাজ করে যে, দ্বীন ও শরীয়তের খেলাফ কোন ওয়াসওয়াসা আসলেও সে ঘাবড়ে যায় এবং এইটা মুখে উচ্চারণ করতেও ভয় পায়, তখন ধরে নিতে হবে এটা খাঁটি ঈমানেরই লক্ষণ। চোর-ডাকাত সেখানেই হামলা করে, যেখানে দামী সম্পদ আছে।
এখন মনে হতে পারে ঈমানদার বান্দা হলে ওয়াসওয়াসা কেন আসবে?
হাদিসটি খেয়াল করি, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “আল্লাহ তা’আলা আমার উম্মতের অন্তরে আবর্তিত কুচিন্তা ও ওয়াসওয়াসার বিষয়টি মাফ করে দিয়েছেন— যে পর্যন্ত এগুলো কার্যে পরিণত অথবা মুখে উচ্চারন না করা হয়।
—বুখারী,মুসলিম
অর্থাৎ এইসব কুচিন্তা ও ওয়াসওয়াসা যেই পর্যন্ত ওয়াসওয়াসা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে, সে পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে এর উপর কোন শাস্তি দেয়া হবে না। তবে যখন এইগুলা ওয়াসওয়াসার পর্যায় অতিক্রম করে কথা বা কাজে পরিনত হয়ে যায়, তখন এগুলোর জন্য শাস্তি দেয়া হবে।
তাই যতই ওয়াসওয়াসা আসুক। সেগুলো ইগনোর করেন। এমনকি অন্য কাউকে বলা থেকেও বিরত থাকেন। শয়তানকে খোঁচাচ্ছে খোঁচাক, আপনি তার ফাঁদে পা দিবেন না। দেখবেন একসময় শয়তান নিরাশ হয়ে আপনাকে ছেড়ে দিবে। আর হ্যাঁ যত বেশি ওয়াসওয়াসা আসবে তত বেশি আল্লাহর শরণাপন্ন হবেন। এতে ফায়দা আপনারই। এটাও আপনার জন্য প্লাস পয়েন্ট মনে করে নেন! ওইযে সার্ফএক্সেলের সেই এডের কথা মনে আছে না?? “দাগ থেকে যদি দারুন কিছু হয় তাহলে দাগই ভালো।” এক্ষেত্রেও খারাপের মাঝে ফায়দাটাই দেখেন। (রব্বুল আ’লামীন চান তো) দেখবেন আস্তে আস্তে সমস্যাগুলো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
তবে এরপরেও যদি খুব বেশি সমস্যা মনে হয় তাহলে আব্দুল্লাহর ওয়াসওয়াসা পোস্ট পড়ে অথবা অডিও ক্লিপটা শুনে সে মোতাবেক আমল করতে পারেন।
উপকার পাবেন ইনশাআল্লাহ।
কমেন্ট থেকে-
Apu kichu way bole diben.. kanna kore fed up hoye jai.. bathroom theke ber hote parina.
– বাথরুমের কাজ যখনই শেষ হবে। কোন কিছু চিন্তা না করেই দ্রুত বের হয়ে যাবেন।। যদিওবা তা একদিনে সম্ভব না তবুও চেষ্টা চালিয়ে যান আপু….
: Namaz shuru kore diye mone hoy allahu akbar taqbir korini.. abar bhenge dei.. pura namaze eta korini oita hoynai cholte thake..
– এরপর থেকে মনে হলেও অইটা করবেন না। সালাত কন্টিনিউ করবেন। বেশিরভাগ মানুষেরই এই সমস্যা আছে আপু। কথা একটাই শুধু মনে হলে কিছুই করবেন না। যখন শতভাগ শিওর হবেন তখনই নতুন করে শুরু করবেন আপু।
: আমার ৪রাকাত নামাজে প্রায় সব সময়ই সাহুসিজদা দিতে হয়। শুধু সন্দেহ হয়। মনে হয়- সিজদা কম দিয়েছি কোন রাকাতে বা ২রাকাতের সময় বসি নি। এর কি সমাধান হতে পারে। নামাজে বাজে কথা মনে পড়লে কি করা উচিত??
– ১০০% শিওর না হলে আপনার সাহু-সিজদা দেয়ার দরকার নেই আপু। চেষ্টা করুন মনোযোগসহকারে সালাত আদায় করার….
: ocd এর জন্য গতকাল ডাক্তার দেখাই আসলাম। অসিডি শয়তানের ধোঁকায় হয় কিনা জানি না তবে আল্লাহ সম্পরকে যে কু চিন্তা আসে তা শয়তানের কারনে। ডাক্তার এর চেম্বের এর পাসে এক পেপার এ লেখা ছিল অসিডি > আল্লাহ সম্পর্কে আজেবাজে চিন্তা আসে। এখন শুচিবাই মেডিক্যাল সমাধান হবে না ইসলাম এর রুলস অনুসরন করতে হবে। কুরান এ আসছে যখন শয়তান তোমাকে ঘোরাতে চাই তুমি আল্লাহর আশ্রই প্রার্থনা কর।?????
– ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে তো নিষেধ করা হয়না। তবে যেইটাই করুন রব্বুল আ’লামীনে মর্জি না হলে সুস্থতা সম্ভব না। তাই বেশি বেশি করে দু’আ করুন, তাঁকে ডাকুন…
– যারা অযু, গোসল, নামাজ নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন তাদের বলি উত্তমরুপে একবারই অযু করুন এরপর যত্নসহকারে সালাত আদায় করে নিন। এরমধ্যে যদি আপনি সংশয়ে পড়ে যান তাহলে নতুন করে কোন কিছুরই দরকার নেই… মনে রাখবেন ওয়াসওয়াসা মানেই সংশয়রোগ। তাই চেষ্টা করেন ইগনোর করা। তারপরেও না পারলে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি ১০০% শিওর তো?? যদি ১০০% শিওর হোন তাহলে আবার অযু করে সালাত আদায় করুন…
এটা শতভাগ সত্যি, আল্লাহর রহমতে আমি মুক্তি পেয়েছি অনেকটা।
ReplyDelete