কালো জিরা (Black Cumin)
মরণ ব্যতিত মহারোগের ঔষধ
শুধুমাত্র আপনাকে জানতে হবে কালোজিরা সেবন আপনি কীভাবে করবেন। আজকের এই লেখাটিতে আমরা সেই বিষয়টিও পরিষ্কারভাবে জেনে নেব। এই কালোজিরার বীজ থেকে এক ধরনের তেল তৈরি হয় যে তেল আমাদের দেহের রোগ দূর করতে অত্যন্ত উপকারী।
কালোজিরার বীজ সরাসরি সেবন করতে পারেন অথবা তেল হিসেবেও সেবন করা যায়। বিশেষত দেহের বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য এই তেল অত্যন্ত উপকারী।
হাজার হাজার রোগ থেকে মুক্তির জন্য কালোজিরার গুণের কথা নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়। তবুও বন্ধু আজ মাত্র এক চামচ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে এমন সব তথ্য আপনাদের জানাবো যে লেখাটি সম্পূর্ণ পড়লে কালোজিরা সম্পর্কে আর কোন তথ্য আপনাদের দরকার হবেনা।
কালোজিরা সম্পর্কিত সকল ধরনের তথ্য অর্থাৎ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং কিভাবে খেতে হবে সবকিছু থাকবে আজকের এই আর্টিকেলটিতে।
তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে কালোজিরা সম্পর্কে একদম সঠিক তথ্য বিস্তারিত ভাবে জেনে নেই। একটু ধৈর্য ধরে কালোজিরা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো জানুন সারাজীবন শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রতিটি মানুষের সুস্থ থাকার জন্য কাজে লাগবে।
১০০ টিরও বেশি উপযোগী উপাদান রয়েছে এই কালোজিরাতে।
সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে কালোজিরার বহুল ব্যবহার উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই সময় থেকে ঘুরে আজ পর্যন্ত চিকিৎসা ক্ষেত্রে কালোজিরার ব্যবহার এর সফলতা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের মত সভ্যতাকেও কালোজিরেকে সর্ব রোগের মহৌষধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ( সা) বলেছেন তোমরা কালোজিরার ব্যবহার করবে। কেননা একমাত্র মৃত্যু ব্যতীত সর্ব রোগের মুক্তি রয়েছে এতে। বুঝতেই পারছেন কেউ যদি সঠিকভাবে সঠিক মাত্রায় কালোজিরা সেবন করে থাকেন তাহলে তার দেহ থেকে ছোটো-বড় বহু রোগ একেবারে দূর করা সম্ভব।
নাম্বার ১ সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে একদম বাসিমুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে হালকা গরম পানি পান করুন তারপরে পেট পরিষ্কার করে ১ চা চামচ পরিমাণ কালোজিরা খুব ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে আবারো এক গ্লাস পানি পান করুন।
কেউ চাইলে এর সাথে এক থেকে দুই কোয়া রসুন ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। কেউ চাইলে কালোজিরার সাথে আদাও ভালো করে চিবিয়ে খেতে পারেন।
যাদের সকালে কাঁচা হলুদ খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে কাঁচা হলুদের উপকারিতা পাচ্ছেন তারা এই কালোজিরার সাথে কাঁচা হলুদ যুক্ত করে খেতে পারেন। আবার শুধুমাত্র কালোজিরা আপনারা সকালবেলায় ১ চা-চামচ করে খেয়ে তারপরে পানি পান করে তার আধাঘন্টা পরে সকালের নাস্তা করুন।
এতে আপনার দেহ থেকে সকল ধরনের জীবাণু ভাইরাস একেবারে দূর হয়ে যাবে। বহুদিন থেকেই গ্যাস, এসিডিটি ও বদহজম, গড় হজমের জন্য পেটের মধ্যে সবসময় অস্বস্তি, পেট পরিষ্কার না হওয়া, খাওয়ার পরে অ্যাসিডিটিতে বুক জ্বালাপোড়া করা এই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তারা এই নিয়মে কালোজিরা সেবনে করে খুব ভালো ফল পাবেন।
এমনকি যাদের ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারাও এই উপায়ে কালোজিরা খেয়ে উপকার পাবেন। এই একই ভাবে কালোজিরা সেবন করে ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগীরা ডায়াবেটিসকে একদম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। কারন কালোজিরা সেবন আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে আপনাকে ডায়াবেটিস নিয়ে আর কখনোই চিন্তা করতে হবে না।
যেকোনো মুদি দোকান, গ্রোসারি শপ, ওষুধের দোকান অথবা আয়ুর্বেদিক পণ্য পাওয়া যায় এমন দোকান থেকে কালোজিরার তেল সংগ্রহ করুন। তবে মনে রাখবেন পুরাতন কালোজিরার তেল কিন্তু শরীরের জন্য ভালো নয়।
বিশেষত সেবনের জন্য পুরাতন কালোজিরার তেল একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কালোজিরার তেল ছয় মাস পর্যন্ত আপনি খেতে পারবেন কিন্তু বাহ্যিক ঘরের জন্য এক বছর পর্যন্ত এর ব্যবহার করা যাবে। কালোজিরা আপনি কয়েক ভাবে সেবন করতে পারেন।
যারা দীর্ঘদিন থেকেই অ্যাজমা বা হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, বুকে জমাট বাধা কফ, কাশি এই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এই নিয়মে কালোজিরা খাওয়া খুবই উপকারী এবং সেইসাথে কালোজিরার তেল বুকে এবং পিঠে দিনে দুইবার করে মালিশ করতে হবে। এই মালিশের তেল অন্যভাবেও প্রস্তুত করা যায়। কালোজিরার তেল ৩ থেকে ৪ টেবিল-চামচ তিন থেকে চার কোয়া রসুন কুচি এবং হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া একসাথে ফুটিয়ে তেলটা আরো বেশি কার্যকরী করে তোলা যায়।
বাড়তি করে ইনসুলিন গ্রহণেরও প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু যারা ইতোমধ্যেই ইনসুলিনের গ্রহন শুরু করেছেন ওষুধ খাচ্ছেন তারা একেবারে ওষুধ বন্ধ করে না দিয়ে ওষুধের পাশাপাশি কালোজিরা সেবনে এইভাবে করে যেতে থাকুন। ধীরে ধীরে ঔষধের মাত্রা এবং ইনসুলিন গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনতে আনতে আপনি ওষুধ ইনসুলিন গ্রহণে ছেড়ে দিয়ে কালোজিরা সেবনকে নিয়মিত করুন।
কালোজিরা রসুন সহযোগে একটানা খেতে থাকুন ডায়াবেটিস সারা জীবনের জন্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যারা হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের বলব এই একই নিয়মে কালোজিরা সেবন করুন। চাইলে আপনি এর সাথে ১-২ কোয়া রসুন যুক্ত করে নিন।
রসুন এবং কালোজিরা এই একই নিয়মে খেলে আপনার রক্তচাপ সারাজীবন নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং সেইসাথে কখনোই দেহের এলজিএল অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়বে না। সবসময় কোলেস্টরেল স্বাভাবিক থাকবে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর এজন্যই আপনি কখনোই হার্টঅ্যাকের মত মৃত্যুঝুঁকিতে পড়বেন না।
আপনার হৃদরোগের মতো কঠিন রোগ কখনোই হবে না। একটি বিষয় আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনার হার্ট ভালো থাকবে নিয়মিত কালোজিরা সেবনে এবং এর সাথে যদি এক থেকে দুই কোয়া রসুন যুক্ত করে নিতে পারেন তাহলে তা আরো বেশি কার্যকরী ও ফলপ্রসূ হবে।
কালোজিরা সেবনে আরেকটি নিয়ম হলো ১ চা চামচ পরিমাণ কালোজিরা এবং ১ চা চামচ মধু একসাথে সেবন করা। আপনি চাইলে এই নিয়মে দিনে ২ বারও সেবন করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার রোগের তীব্রতার উপর তা নির্ভর করছে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে টানা সাতদিন দুইবার করে এক চা-চামচ করে কালোজিরা এবং মধু সকালে ও রাতে সেবন করতে পারেন।
তাহলে ওটা খুলে যাবে এবং সেইসাথে ব্যাথাও দূর হবে। কালোজিরার আশ্চর্য গুণ হলো কালোজিরা যেমন হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা খেতে পারবেন তেমনি যাদের লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ তারাও খেতে পারবেন। আসলে কালোজিরা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে আপনার রক্তচাপকে স্বাভাবিক করে।
এই কারণে কালোজিরা এবং মধুর যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে আপনার রক্তচাপ সবসময় নিয়ন্ত্রণে থাকবে স্বাভাবিক থাকবে। রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং সেইসাথে কালোজিরা মস্তিস্কের স্মৃতিশক্তি অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে, ঘুম ভালো করতে এবং মানসিক উদ্বিগ্নতা অবসাদ দূর করতে নিয়মিত কালোজিরা সেবন করুন।
রাতে এক গ্লাস দুধের সাথে এক চামচ পরিমাণ কালোজিরা গুঁড়ো করে ভালো করে মিশিয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন দেখবেন রাতের ঘুম যেমন ভালো হবে তেমনি শরীর থেকে সকল ধরনের রোগের চিহ্ন একেবারে মুছে যাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠবেন একদম ফিট লাগবে নিজেকে। এভাবে কালোজিরার সেবন করলে আপনার দেহ থেকে আরও কিছু রোগ একেবারে দূর হয়ে যাবে।
যারা যৌন দূর্বলতায় ভুগছেন তাদের যৌন দুর্বলতা সমস্যা একেবারে দূর হবে। পুরুষদের যৌন অক্ষমতা যৌন দুর্বলতা দূর করতে এই কালোজিরা দুধের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে সেবন করতে পারেন। আবার চাইলে আপনি সকালবেলায় কালোজিরা রসুন এবং মধু একসঙ্গে সেবন করতে পারেন। এতে সকল ধরনের যৌন দূর্বলতা একেবারে দূর হবে।
চোখের যে কোন সমস্যায় চোখের পিড়ায় চোখ লাল হলে ফুলে গেলে চোখের যেকোনো ধরনের এলার্জি হলে কালোজিরার তেল চোখের ওপরে নিচে এবং উভয় পাশের মালিশ করুন সেই সাথে কালোজিরা যে কোন নিয়মে আপনি খেতে থাকুন তাহলে চোখের পীড়া দূর হবে। কিডনি ও লিভার ভালো রাখতে প্রতিদিন কালোজিরা সেবন করুন।
এমনকি কিডনি বা ব্লাডারে পাথর হলে ও কালোজিরা সেবনে সেই পাথরকেও গলিয়ে বের করে দিতে পারে। যদি প্রাথমিক অবস্থায় কালোজিরা সেবনে নিয়মিত করা যায় দিনে দুইবার করে তাহলে এই রোগ দূর করা সম্ভব। কালোজিরা সেবন করুন এবং আপনার ফুসফুস কিডনি লিভার হার্ট এই সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ একদম সুস্থ সবল রাখুন আজীবন।
যাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা আছে চুল পড়ার সমস্যা আছে তারা নিয়মিত কালোজিরা সেবনে করুন এবং কালোজিরার তেল মালিশ করতে থাকুন। অনেকেরই ত্বকের ছুলি,মেছতা আছে তারা আক্রান্ত স্থান আপেল দিয়ে ঘষে ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে তারপরে কালোজিরার তেল মালিশ করুন।
পনের দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত এই রোগের উপশম হবে। আবার যাদের চুল পড়ার পর তাদের সমস্যা আছে খুশকির সমস্যা আছে তারা কালোজিরা সেবনে পাশাপাশি কালোজিরার তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করতে থাকুন। এতে চুল পড়ার সমস্যা দূর হবে চুলের গোড়া অনেক বেশী মজবুত হবে।
তেলের উপকারিতা!
সেই তেল মালিশ করলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট খুব দ্রুত উপশম হবে। এই একই তেল আপনি বাতের ব্যথায় ব্যবহার করতে পারেন। বাতের ব্যথা বা ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার কারণে যে ব্যথা হয়ে থাকে ফুলে লাল হয়ে যায় এবং এমন ব্যথা হয় যে একজন মানুষ হাঁটাচলা পর্যন্ত করতে পারেন না তিনি একই নিয়মে কালোজিরা সেবন করবেন মধু সহযোগী এবং এইভাবে তেল মালিশ করবেন দিনে দুইবার।
তাহলে সকল ধরনের বাত ব্যথা, হাড়ের ব্যথা, জয়েন্টের ব্যাথা, কোমরের ব্যথা সব একেবারে দূর হয়ে যাবে। মাথা ব্যথায় এই তেল কপালে এবং কানের পাশে মালিশ করুন মাথাব্যথা একেবারে দূর হয়ে যাবে। সাইনোসাইটিস হলেও এই তেল আপনি মালিশ করতে পারেন কপালে নাকের পাশে এবং মাথার দিকে।
কালোজিরা সেবন করতে পারেন কিন্তু ঔষধ হিসেবে নয় এবং যেসব শিশুর বয়স ২ বছর হয়নি তারাও ওষুধের মতো কালোজিরা সেবন করতে পারবেন না। শুধুমাত্র বুকে ঠান্ডা লাগলে ব্যথা হলে কালোজিরার তেল প্রস্তুত করে তা মালিশ করতে পারেন।
এতে কোন ধরনের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই। আজকের লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্টে জানাতে কিন্তু ভুলবেন না যেন।
এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ হেলথ টিপস পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
SR Khan