"আর গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। 

তার উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে পান করাই 

বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু" -সুরা নাহল : ৬৬

 

 

প্রিয় নবী (সা.) দুধ খুব পছন্দ করতেন। মেরাজের রাতে নবী (সা.) এর সামনে 

জিবরাইল (আ.) দুধ আর মধু পেশ করে যে কোনো একটি গ্রহণের কথা বলেন। 

নবী (সা.) দুধ গ্রহণ করে পান করেন।

 

দুধের উপকারিতা:

১। দুধ ক্যালসিয়ামের সব চাইতে ভালো উৎস। ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও 

হাড়ের গঠন মজবুত করে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম ভিটামিন ডি এর সাহায্যে 

আমাদের হাড় ও দাঁতে শোষিত হয়ে হাড় ও দাঁতের গড়ন দৃঢ় করে এবং 

দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। বাচ্চাদের ছোটকাল থেকেই দুধ পানের অভ্যাস 

করানো উচিৎ এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই অভ্যাসটি অপরিবর্তিত 

থাকলে দেহে বার্ধক্যও আসবে দেরিতে।


২। কর্মব্যস্ততার পর ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস গরম দুধ খুবই উপকারী। 

গরম দুধ ক্লান্ত পেশি সতেজ করতে সাহায্য করে। এছাড়া, দুধ খেলে শরীরে 

মেলটনিন ও ট্রাইপটোফ্যান হরমোন নিঃসৃত হয়, এই হরমোনগুলো 

ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে।


৩। দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মাংশপেশির গঠনে অনেক বেশি 

সহায়তা করে। দুধ মাংশপেশির আড়ষ্টতা দূর করতে সক্ষম।


৪।। দুধে রয়েছে পটাশিয়াম যা হৃদপিণ্ডের পেশির সুস্থতা বজায় রাখে। 

তাছাড়া এর খনিজ উপাদান হৃদপিণ্ড সতেজ রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণও করতে 

পারে।


৫। দুধে আছে প্রচুর ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা চুলের জন্য 

খুব উপকারী।


৬। প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধ পান করলে আজেবাজে খাবারের চাদিহা কমে। 

এতে করে ওজনও কমে যায়।


৭। যারা পাকস্থলীর আলসার তথা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী, তাদেরও 

দুধ খাওয়া উচিত নয়। এ ধরনের রোগী দুধ খেলে পেট ব্যথা ও ডায়রিয়ায় 

আক্রান্ত হতে পারেন।


৮। যারা প্যানক্রিয়েটিটিস (Pancreatitis) বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ রোগে

আক্রান্ত, তাদের উচিত দুধ না-খাওয়া। দুধে স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। 

এ ধরনের উপাদান হজমের জন্য পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত এনজাইম

প্রয়োজন হয়। যদি অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দুধ খান, তবে তার অসুস্থতা বেড়ে যাবে।


৯। এলার্জি থাকলে, দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হোন। কারণ, এলার্জির 

রোগীদের দুধ খেতে নিষেধ করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। দুধ আপনার 

এলার্জি বাড়িয়ে দিতে পারে। এলার্জির রোগী দুধ খেলে তার পেট ব্যথা ও 

ডায়রিয়াও হতে পারে। তা ছাড়া, অন্ত্র ফুটো হয়ে রক্তপাতও হতে পারে।
গরুর দুধে হজমে সমস্যা, পেটের গণ্ডগোল কিংবা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত 

লোকের কয়েকটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প যা দুধের মতোই পান করা বা রান্নায় ব্যবহার করা যায়:

১। সয়া দুধ।

গরুর দুধের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিকল্প হলো সয়া দুধ। সয়াবিনের নির্যাস 

থেকে এ দুধ তৈরি হয়। এটি চিনি মিশিয়ে মিষ্টি করে কিংবা চিনি ছাড়াও 

খাওয়া যায়। এ ছাড়া বাজারে এটি চকলেট ও ভ্যানিলা স্বাদেও পাওয়া যায়।

২। রাইস দুধ।

চালে খুব কম মানুষেরই অ্যালার্জি বা অনুরূপ সমস্যা হয়। আর এ কারণে 

সেদ্ধ চালের গুঁড়া থেকে তৈরি এ দুধ অনেকেই পছন্দ করে। গরুর দুধের 

সঙ্গে তুলনায় এ দুধে রয়েছে উচ্চমাত্রার কার্বহাইড্রেট ও নিম্নমাত্রায় প্রোটিন।

 

৩। নারিকেল দুধ।

গরুর দুধের সঙ্গে তুলনায় নারিকেল দুধ ঘনত্ব ও রঙের দিক দিয়ে মিল রয়েছে

। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্যাট। অনেকটা বাদামের মতো স্বাদ থাকায় এটি 

বেকিংয়ে ব্যবহার করা যায়।

 

৪। অ্যামন্ড দুধ।

অ্যামন্ড বা কাঠ বাদামের নির্যাস থেকে এ দুধ তৈরি হয়। এতে গরুর দুধের 

তুলনায় কম কম প্রোটিন থাকলেও স্বাদ ও গন্ধ আকর্ষণীয়। এটি রান্নাতেও 

ব্যবহার করা যায়।

 

৫। হেম্প দুধ।

যারা দুধে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত তাঁরা পান করতে পারেন হেম্প দুধ। 

এটি হেম্প বীজ, মিষ্টি ও পানি মিশ্রণ করে তৈরি হয়। সাধারণ দুধের চেয়ে 

বেশি সময় এটি সংরক্ষণ করা যায়।

 

শেষ কথা:

প্রতিদিন খাবার তালিকায় মাত্র এক গ্লাস দুধ আমাদের দেহের যতোটা 

উপকার করে তা অন্য কোনো খাবার করতে পারে না। এই কারনেই দুধকে 

বলা হয় সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার অর্থাৎ ‘সুপারফুড’।দুধ খুবই ভালো একটি খাদ্য;

অথচ এ খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রেও আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

"পুষ্টি বিষয়ে সচেতন হলে,

মেধাবী জাতি উঠবে গড়ে।"